করোনা প্রতিরোধযুদ্ধে ভিয়েতনামের বিশ্বজয়
মিয়া আমীর পারভেজ, মানামা, বাহরাইন, ০৮ এপ্রিল ২০২০, বুধবার: এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাস কভিড-১৯ রোগের প্রাদূর্ভাব থেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলায় সর্বাধিক সফল দেশ হিসাবে ভিয়েতনামের নাম সবার উপরে।
গতকাল ৭ এপ্রিল মঙ্গলবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা অনুযায়ী দেশটিতে এখন পর্যন্ত কোন রোগীই মারা যায়নি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গতরাতের ভাষ্য অনুযায়ী ভিয়েতনামে করোনা ভাইরাসে সর্বমোট এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২৪৫ জন। যদিও জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় এ সংখ্যাকে বলেছে ২৪৯।
তবে ভিয়েতনামে করোনা ভাইরাসে এ পর্যন্ত কেউ মারা যায়নি এ ব্যাপারে উভয় সংস্থাই একই মত পোষণ করে। আর অসুস্থ্যদের মধ্যে থেকে প্রায় অর্ধেক রুগী অর্থাৎ ১২৩ জন সুস্থ্য হয়ে ঘরে ফিরেছেন।
যেখানে প্রতিবেশী উন্নত দেশ চীন, জাপান, দক্ষিন কোরিয়া এবং ইউরোপ, আমেরিকা আজ এত বিপর্যুস্ত ও ব্যর্থ সেখানে ভিয়েতনামের মত স্বল্পন্নোত ও পর্যটন নির্ভর একটি দেশ কিভাবে এ মরণব্যাধির আক্রমণ প্রতিহত করতে সক্ষমতা অর্জন করেছে তা অবশ্যই অনেকের কাছে অনুকরণীয় ও গবেষণার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের মতে, দেশটি পাশের অঞ্চল চীনে রোগটি দেখা দেবার পর থেকে অতি সতর্কতা অবলম্বন এবং পুর্ব-প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণকে উদাহরণ হিসাবে দেখিয়েছেন। জানা গেছে, সরকার অনেকদিন ধরেই স্বাস্থ্য খাত ও চিকিৎসার উপর ব্যয় কমিয়ে রোগ প্রতিরোধ কর্মসূচিকে অধিক গুরুত্বারোপ করার কর্মপদ্ধতি অনুসরণ করে আসছে।
এ ছাড়া চীনে ভাইরাস সংক্রমণের পর থেকেই ভিয়েতনাম সারাদেশে শুরু করে লক ডাউন। যা মহামারী এই ভাইরাসের... আক্রমণ থেকে অতি সহজেই নিস্তার লাভে সক্ষম হচ্ছে !
২৩ জানুয়ারি সর্বপ্রথম করোনা ভাইরাসে অসুস্থ্য ৬৬ বছর বয়সের এক স্থানীয় নারীর খবর প্রকাশ করে সরকার, যিনি তখন চীন সফর করে এসেছিলেন। সেদিন থেকে ১১ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ২ জন চীনা নাগরিক সহ মাত্র ১৪ জন রোগী সনাক্ত করা হয়।
ঠিক তখন থেকেই বিচলিত ও সতর্ক স্বাস্থ্য বিভাগ জরুরী ভিত্তিতে বাস্তব অনেকগুলো পদক্ষেপ নেয় এবং সর্বস্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। সারাদেশে জনসাধারণকে ব্যাপকভাবে সতর্ক ও সচেতন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়, সন্দেহভাজন মানুষদের সন্ধান করে তাদের যথাযথ পরীক্ষা ও অসুস্থ্যদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়।
কিন্ত এত প্রচেষ্টা ও সফলতার মাঝে গত মাসে মার্চের ২ তারিখে এক নাটকীয় ঘটনার পর সরকারী তড়িৎ ভূমিকায় এক বিশাল বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পায় সচেতন এই জাতি। সেদিন একজন ব্যবসায়ী মহিলা ইউরোপ সফর শেষে দেশে ফিরে আসেন এবং বিমানবন্দরের হেল্থ চেকিং অমান্য করে পালিয়ে যান শহরের দিকে।
এরপর অনেক চেষ্টা করে পুলিশ তাকে আটক করে এবং পরীক্ষা শেষে তার দেহে ভাইরাস ধরা পড়ে। এরপর ঐ মহিলাকে বহনকারী বিমানের সকল যাত্রীদেরকে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। বিমানবন্দর থেকে পলায়নকালে যে রাস্তা দিয়ে ঐ নারী পালিয়েছিলেন সেই রাস্তাকে জীবাণুনাশক ওষুধ ছিটানো হয়, সে রাস্তার দু'পাশে বসবাসকারী সকল অধিবাসীদেরকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় এবং চিকিৎসার আওতায় আনা হয়।
কিন্ত এত কিছুর পরেও বেশ কিছু মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে এবং যার ফলশ্রুতিতে রুগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৪৯ জনে। কভিড - ১৯ ভাইরাস রোগ প্রতিরোধে বিশ্বজয়ের পাশাপাশি স্বল্পমূল্যে কার্যকরী রোগ সনাক্তকারী যন্ত্র উদ্ভাবন করেও সারা বিশ্বকে তাকে লাগিয়ে দিয়েছে ভিয়েতনাম।
মন্তব্য